বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:লাদাখ সীমান্ত গালওয়ানে চিনা সেনার হামলায় ২০ ভারতীয় জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন। ভারতীয় সেনার পাল্টা আক্রমণে ৪৩ চিনা সেনার মৃত্যু হয়েছে। ২০ ভারতীয় সেনার মৃত্যুর খবর স্বীকার করে নিয়েছে ভারত। তবে ৪৩ চিনা সেনার মৃত্যু নিয়ে আশ্চর্য নীরব রয়েছে চিন। তারা শুধু জানিয়েছে, দুই পক্ষের মধ্যে ভয়ঙ্কর সঙ্ঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষেরই অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বেজিংয়ের নীরব থাকার বিষয়টি অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে ধারণা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের। অন্যদিকে, কোনও কোনও বেসরকারি সংবাদ সংস্থার দাবি, চিন সেনার মৃত্যুর সংখ্যা ৪৫–ও হতে পারে।
যে ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে বাঙালি জওয়ান রয়েছেন ২ জন। একজন বীরভূমের রাজেশ ওঁরাও। অপরজন আলিপুরদুয়ারের বিপুল রায়। বীরভূমের ওঁরাও পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁদের ছেলের জন্য তাঁরা গর্বিত। তাঁরা খুশি হবেন যদি ভারতীয় সেনা চিনা সেনাদের আরও সমুচিত জবাব দেয়। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ১৪৫ বিহার রেজিমেন্টে যোগ দিয়েছিলেন রাজেশ ওঁরাও। পরিবারের আর্থিক অবস্থা মোটেও ভালো ছিল না। সেই অভাবের সঙ্গে লড়াই করেই চাকরি পেয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে। সিউড়ির বিদ্যাসাগর কলেজে পড়ার সময়ই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। মঙ্গলবার রাতে সেনাবাহিনী থেকে ফোনে ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে বারবারই জ্ঞান হারাচ্ছেন রাজেশের মা। গোটা এলাকা ফুঁসছে। সকলেরই দাবি, চিনা সেনাদের উপযুক্ত জবাব দিক ভারত। সেই সঙ্গে ওই অঞ্চলে চিনা পণ্য বর্জনেরও দাবি উঠেছে।
গালওয়ানে প্রাণ হারিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের বিপুল রায়ও। মাত্র কয়েক বছর আগেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর বাড়ি বিন্দি পাড়ায়। এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। তাই তাঁর মৃত্যুতে গোটা পাড়া ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। অনেকেই বলছেন, চিনের কোনও জিনিসই তাঁরা আর ব্যবহার করবেন না। সেই সঙ্গে ভারতীয় সেনাদের কাছে তাঁদের আর্জি, চিনা সেনাদের বিরুদ্ধে যতখানি সম্ভব কড়া পদক্ষেপ করুক ভারত। বাড়িতে রয়েছেন বিপুলের মা, বাবা, স্ত্রী এবং পাঁচ বছরের এক মেয়ে। পরিবারের কেউই এদিন কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। তবে শোকের মধ্যেও যাঁরা কথা বলতে পেরেছেন, তাঁরা জানিয়েছেন, সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় এলাকায় যাতে চিনা সেনা ঢুকতে না পারে, তেমনই কড়া অবস্থান নিতে হবে ভারত সরকারকে। গত ডিসেম্বরে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন বিপুল। আর আসতে পারেননি। এবার ফিরবেন। তবে কফিনবন্দি হয়ে। বিপুল রায়ের মৃত্যুতে শুধু বিন্দি পাড়াই নয়, গোটা আলিপুরদুয়ারই যেন শোকস্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।
এদিন রাজেশ ওঁরাও এবং বিপুল রায়ের বাড়িতে গিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তারা। সকলেই জানিয়েছেন, দুই পরিবারের সাহায্যার্থে সরকার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। এদিকে, দুই জওয়ানের মৃত্যুতে নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোক প্রকাশ করেছেন। জানিয়েছেন, দুই পরিবারকেই ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়ার কথাও বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে বলে নবান্ন সূত্রে খবর।
অন্যদিকে, বুধবার সারাদিন ধরেই সারা দেশে চিনের দ্রব্য বয়কট ও প্রত্যাখ্যানের দাবিতে পথে নেমেছেন মানুষ। বহু জায়গায় তুমুল বিক্ষোভ–আন্দোলনও হয়েছে। হয়েছে পশ্চিমবাংলায়ও। এদিন সকালে রাস্তায় গাড়ির টায়ার জ্বালিয়ে সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ দেখান পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামের ভেকুটিয়া এলাকায়। বিক্ষোভের খবর পাওয়া গিয়েছে আলিপুরদুয়ার, বালুরঘাট, বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া থেকেও।